বাংলা ব্যাকরণে গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা
ভাষা
⇨ বাগযন্ত্রের দ্বারা উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনির সাহায্যে মানুষের মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যমকে ভাষা বলে।
⇨ মানুষের মুখে উচ্চারিত অর্থবোধক ও মনোভাব প্রকাশক ধ্বনিসমষ্টিকে ভাষা বলে।
সাধু ভাষা
সংস্কৃত ভাষা থেকে উৎপন্ন ভাষাকে সাধু ভাষা হিসেবে অভিহিত করা হয়।
চলিত ভাষা
সাধারণ মানুষের মুখের ভাষাকে চলিত ভাষা বলে।
প্রমিত ভাষা
চলিত ভাষার আদর্শরূপ থেকে গৃহীত ভাষাকে বলা হয় প্রমিত ভাষা।
আঞ্চলিক ভাষা/উপভাষা
বিভিন্ন অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মুখের ভাষাকে আঞ্চলিক ভাষা বলে। আঞ্চলিক ভাষার অপর নাম উপভাষা। আক্ষরিক অর্থে উপভাষা বলতে 'ভাষা'র চেয়ে একটু নিম্ন বা কিছুটা কম মর্যাদাসম্পন্ন ভাষাকে বোঝায়।
বাংলা ব্যাকরণ
ব্যাকরণ শব্দটির অর্থ বিশেষভাবে বিশ্লেষণ। ভাষার অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা আবিষ্কারের নামই ব্যাকরণ। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ'র মতে, যে শাস্ত্র জানিলে বাঙ্গালা ভাষা শুদ্ধরূপে লিখিতে, পড়িতে ও বলিতে পারা যায়, তাহার নাম বাঙ্গালা ভাষা
ভাষার মূল উপকরণ ⇨ বাক্য
ভাষার মূল উপাদান ⇨ ধ্বনি
ভাষার ক্ষুদ্রতম একক ⇨ ধ্বনি
ভাষার বৃহত্তম একক ⇨ বাক্য
ভাষার ইট বলা হয় ⇨ বর্ণ
ভাষার স্বর বলা হয় ⇨ ধ্বনি
ভাষার ছাদ বলা হয় ⇨ বাক্য
শব্দের মূল উপাদান ⇨ ধ্বনি
শব্দের মূল উপকরণ ⇨ ধ্বনি
শব্দের ক্ষুদ্রতম একক ⇨ ধ্বনি
বাক্যের মূল উপাদান ⇨ শব্দ
বাক্যের মৌলিক উপাদান ⇨ শব্দ
বাক্যের মূল উপকরণ ⇨ শব্দ
বাক্যের ক্ষুদ্রতম একক ⇨ শব্দ
ধ্বনি
ভাষার মূল উপাদান ধ্বনি। মানুষের বাক-প্রত্যঙ্গ অর্থাৎ কণ্ঠনালী, মুখবিবর, জিহ্বা, আল-জিহ্বা, নাসিকা, কোমল তালু, শক্ত তালু, দাঁত, মাড়ি, চোয়াল, ঠোঁট ইত্যাদির সাহায্যে উচ্চারিত আওয়াজকে ধ্বনি বলে। ধ্বনিই ভাষার মূল ভিত্তি।
বর্ণ
ধ্বনি নির্দেশক প্রতীককে বা চিহ্নকে বর্ণ বলে।
অক্ষর
বাগযন্ত্রের ক্ষুদ্রতম প্রয়াসে উচ্চারিত ধ্বনি বা শব্দাংশের নাম অক্ষর।
উপমা
একই বাক্যে ভিন্ন জাতীয় অথচ সাদৃশ্য বা সমান গুণবিশিষ্ট দুটি বস্তুর মধ্যকার সাদৃশ্য উল্লেখ থাকলে তাকে উপমা বলে।
অনুপ্রাস
একই বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছের বারবার বিন্যাসকে অনুপ্রাস বলে।
ক্রিয়াপদ
যে পদের দ্বারা কোন কার্য সম্পাদন বুঝায় তাকে ক্রিয়াপদ বলে।
কারক
⇨ বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের যে সম্পর্ক তাকে কারক বলে।
⇨ ক্রিয়াপদের সাথে সম্পর্কযুক্ত পদকে কারক বলে।
⇨ ক্রিয়ার সঙ্গে বাক্যের বিশেষ্য ও সর্বনামের যে সম্পর্ক, তাকে কারক বলে।
কর্তৃকারক
⇨ ক্রিয়া যার দ্বারা সম্পাদিত হয় তাকে কর্তৃকারক বা কর্তা কারক বলে।
কর্ম কারক
⇨ যাকে আশ্রয় করে কর্তা ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে কর্ম কারক বলে।
করণ কারক
⇨ যার দ্বারা বা যে উপায়ে কর্তা ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে করণ কারক বলে।
অপদান কারক
⇨ যে কারকে ক্রিয়ার উৎস নির্দেশ করা হয় তাকে অপদান কারক বলে।
অধিকরণ কারক
⇨ যে কারকে স্থান, কাল, বিষয় ও ভাব নির্দেশিত হয়, তাকে অধিকরণ কারক বলে।
সম্বন্ধ কারক
⇨ যে কারকে বিশেষ্য ও সর্বনামের সঙ্গে বিশেষ্য ও সর্বনামের সম্পর্ক নির্দেশিত হয় তাকে সম্বন্ধ কারক বলে।
বিভক্তি
বাক্যের প্রতিটি শব্দের সাথে অন্বয় সাধনের জন্য যে সকল বর্ণ যুক্ত হয় তাকেরকে বিভক্তি বলে।
অপিনিহিত
পরের ই-কার ও উ-কার আগেই উচ্চারিত হওয়ার রীতিকে অপিনিহিত বলে।
ধ্বনি বিপর্যয়
শব্দের মধ্যে দুটো ব্যঞ্জনের পরস্পর পরিবর্তনকে ধ্বনি বিপর্যয় বলে।
মধ্য স্বরাগম
মাঝে মাঝে উচ্চারণের সুবিধার জন্য সংযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির মাঝখানে স্বরধ্বনি এলে তাকে মধ্য স্বরাগম বলে।
অসমীকরণ
একই স্বরের পুনরাবৃত্তি দূর করার জন্য মাঝখানে স্বরধ্বনি যুক্ত হওয়াকে অসমীকরণ বলে।
প্রগত স্বরসঙ্গতি
আদিস্বর অনুযায়ী অন্ত্যস্বর পরিবর্তন হওয়াকে প্রগত স্বরসঙ্গতি বলে।
বিষমীভবন
দুটো সমবর্নের একটির পরিবর্তন হওয়াকে বিষমীভবন বলে।
সমীভবন
শব্দমধ্যস্থ দুটো ভিন্ন ধ্বনি একে অপরের প্রভাবে অল্প-বিস্তর সমতা লাভ করাকে সমীভবন বলে।
অভিশ্রুতি
বিপর্যস্ত স্বরধ্বনি পূর্বধ্বনি স্বরধ্বনির সাথে মিলে গেলে এবং তদানুসারে পরবর্তী স্বরধ্বনির পরিবর্তন হওয়াকে অভিশ্রুতি বলে।
ব্যঞ্জনচ্যুতি
পাশাপাশি সমউচ্চারণের দুটো ব্যঞ্জনধ্বনির একটি লোপ হওয়াকে ব্যঞ্জনচ্যুতি বলে।
অন্তর্হতি
পদের মধ্যে কোনো ব্যঞ্জমধ্বনির লোপ হওয়াকে অন্তর্হতি বলে।
ক্ষীণায়ন
শব্দ মধ্যস্ত মহাপ্রাণ ধ্বনি অল্পপ্রাণ ধ্বনিতে পরিণত হওয়াকে ক্ষীণায়ন বলে।
ধাতু
⇨ ক্রিয়ার মূল অংশকে ধাতু বলে।
⇨ ক্রিয়ার যে অংশকে বিশ্লিষ্ট করা যায় না তাকে ধাতু বলে।
প্রাতিপদিক
বিভক্তিহীন নাম শব্দকে প্রাতিপদিক বলে।
প্রকৃতি
যে ধাতু বা শব্দের শেষে প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে প্রকৃতি বলে।
প্রত্যয়
যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি ধাতু বা শব্দের পরে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাকে প্রত্যয় বলে।
কৃৎ প্রত্যয়
ক্রিয়া বা ধাতুর পরে যে প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে কৃৎ প্রত্যয় বলে।
শব্দ
এক বা একাধিক ধ্বনি বা বর্ণ মিলে কোনো অর্থ প্রকাশ করলে তাকে শব্দ বলে।
রূপ
শব্দের অর্থযুক্ত ক্ষুদ্রাংশকে রূপ বলে।
সমাস
পরস্পর অন্বয়যুক্ত দুই বা ততোধিক পদকে এক পদে পরিণত করার নাম সমাস।
সন্ধি
পরস্পর কাছাকাছি ধ্বনি বা বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে।
বাক্য
এক বা একাধিক শব্দ দিয়ে গঠিত পূর্ণ অর্থবোধক ভাষিক একককে বাক্য বলে।
পদ
বাক্যের মধ্যে স্থান পাওয়া প্রত্যেকটি শব্দকে পদ বলে।
বর্গ
⇨ বাক্যের মধ্যে একাধিক শব্দের গুচ্ছ একটি পদের মতো কাজ করলে সেই শব্দগুচ্ছকে বর্গ বলে।
⇨ বাক্যের মধ্যে একাধিক শব্দ দিয়ে গঠিত বাক্যাংশকে বর্গ বলে।
কর্তা
বাক্যের ক্রিয়াকে যে চালায় তাকে কর্তা বলে।
কর্ম
যাকে অবলম্বন করে ক্রিয়া সম্পাদিত হয় তাকে কর্ম বলে।
ক্রিয়া
বাক্যের মধ্যে যে অংশ দ্বারা কোনো কিছু করা, ঘটা বা হওয়া বোঝায় তাকে ক্রিয়া বলে।
সরল বাক্য
একটিমাত্র সমাপিকা ক্রিয়া থাকলে তাকে সরল বাক্য বলে।
জটিল বাক্য
একটি মূল বাক্যের অধীনে এক বা একাধিক আশ্রিত বাক্য বা বাক্যাংশ থাকলে তাকে জটিল বাক্য বলে।
যৌগিক বাক্য
এক বা একাধিক বাক্য বা বাক্যাংশ যোজকের মাধ্যমে যুক্ত হলে তাকে যৌগিক বাক্য বলে।
সক্রিয় বাক্য
যেসব বাক্যের বিধেয় অংশে ক্রিয়া থাকে, সেগুলোকে সক্রিয় বাক্য বলে।
অক্রিয় বাক্য
যেসব বাক্যের বিধেয় অংশে ক্রিয়া থাকে না, সেগুলোকে অক্রিয় বাক্য বলে।
বিশেষ্যবর্গ
বিশেষ্যের আগে এক বা একাধিক বিশেষণ বা সম্বন্ধপদ যুক্ত হলে তাকে বিশেষ্যবর্গ বলে।
বিশেষণ বর্গ
বিশেষণজাতীয় শব্দের গুচ্ছকে বিশেষণ বর্গ বলে।
ক্রিয়াবিশেষণ বর্গ
যে শব্দগুচ্ছ ক্রিয়াবিশেষণ হিসেবে লাজ করে তাকে ক্রিয়াবিশেষণ বর্গ বলে।
উদ্দেশ্য
বাক্যে যাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলা হয় তাকে উদ্দেশ্য বলে
বিধেয়
বাক্যে উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা বলা হয়, তাকে বিধেয় বলে।
পূরক
বিধেয় ক্রিয়ার বিশেষ্য অংশকে পূরক বলে।
প্রসারক
বাক্যে উদ্দেশ্য ও বিধেয়কে প্রসারিত করা হয় যেসব শব্দ ও বর্গ দিয়ে, সেগুলোকে প্রসারক বলে।
Comments