অলঙ্কার
অলঙ্কার
কোষিতকী উপনিষদে প্রথম অলঙ্কার শব্দটি পাওয়া যায়ঃ ব্রহ্মালঙ্কারেণ অলঙ্কৃত। ষষ্ঠ শতাব্দীতে আচার্য দন্ডী প্রথম অলঙ্কারের সংজ্ঞা দেন। তা্র মতে, কাব্য শরীরের সৌন্দয বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত অভীষ্ঠ অর্থ সংবলিত পদ বিন্যাসই অলঙ্কার।
অলঙ্কারের প্রকারভেদ
সাহিত্যে অলঙ্কার প্রধানত দুই প্রকার। যথাঃ
১) শব্দালঙ্কার
২) অর্থালঙ্কার
শব্দালঙ্কারঃ
শব্দের ধ্বনিরূপের আশ্রয়ে যে সমস্ত অলঙ্কারের সৃষ্টি হয় তাকে শব্দালঙ্কার বলে। অনুপ্রাস, যমক, শ্লেষ, বক্রোক্তি ইত্যাদি শব্দালঙ্কার।
অর্থালঙ্কারঃ
অর্থের বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য বিধায়ক অলঙ্কারকে বলা হয় অর্থালঙ্কার। উপমা, উৎপ্রেক্ষা, অতিশশোক্তি ইত্যাদি অর্থালঙ্কার।
বিভিন্ন অলঙ্কারের পরিচয়
অনুপ্রাসঃ
একই বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছের বারবার বিন্যাসকে অনুপ্রাস বলে।
উদাহরণঃ
* কাক কালো কোকিল কালো কালো কন্যার কেশ।
সরল অনুপ্রাসঃ
কবিতার কোনো ছত্রে এক বা দুরি বর্ণ একাধিকবার ধ্বনিত হলে তাকে সরল অনুপ্রাস বলে।
উদাহরণঃ
* পেলব প্রাণের প্রথম পশরা নিয়ে।
অন্ত্যানুপ্রাসঃ
কবিতার প্রতি চরণান্তে যে মিল, তাকে অন্ত্যানুপ্রাস বলে।
উদাহরণঃ
* গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কুলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
গুচ্ছানুপ্রাস
একাধিক ব্যঞ্জনধ্বনি যখন দুয়ের বেশি বার একই ছত্রে ব্যবহার হয় তখন তাকে গুচ্ছানুপ্রাস বলে।
উদাহরণঃ
* না মানে শাসন, বসন বাসন অশন আসন যত।
* ভুলোক দ্যুলোক গোলক ছাড়িয়ে।
* নন্দ নন্দন ছন্দ চন্দন বিনিন্দিত অঙ্গ।
যমক
যমক শব্দের অর্থ যুগ্ম। একই শব্দে একই স্বরধ্বনিসমেত একই ক্রমানুসারে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে একাধিকবার ব্যবহার হলে তাকে যমক বলে। চ
* ভারত ভারত খ্যাত আপনার গুণে।
* গুরুর কাছে লব গুরু দুখ।
* সুশাসনের দ্বারা হর্ষবর্ধন প্রজাদের হর্ষ বর্ধন করেছিলেন।
শ্লেষ
একটি শব্দ একবার ব্যবহৃত হয়ে ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করলে তাকে শ্লেষ বলে।
উদাহরণঃ
* কে বলে ঈশ্বর গুপ্ত ব্যাপ্ত চরাচর/ যাহার প্রভায় প্রভা পায় প্রভাকর।
বক্রোক্তি
সোজাসুজি না বলে বাঁকা ভাবে কোনো বক্তব্য প্রকাশ পেলে তাকে বক্রোক্তি বলে।
উদাহরণঃ
* গৌরিসেনের আবার টাকার অভাব কী।
উপমা
একই বাক্যে ভিন্ন জাতীয় অথচ সাদৃশ্য বা সমান গুণবিশিষ্ট দুটি বস্তুর মধ্যকার সাদৃশ্য উল্লেখকে উপমা বলে।
উপমা অলঙ্কারের সাধারণত চারটি অঙ্গ থাকে। যথাঃ
১) উপমেয়ঃ যাকে তুলনা করা হয়।
২) উপমানঃ যার সাথে তুলনা করা হয়
৩) সাধারণ ধর্মঃ যে বৈশিষ্ট্যের জন্য তুলনা করা হয়।
৪) সাদৃশ্যবাচক শব্দঃ মত, সম, হেন, সদৃশ, প্রায় ইত্যাদি।
উদাহরণঃ
* বেতের ফলের মত তার ম্লান চোখ মনে আসে।
রূপকঃ
উপমেয়ের সাথে উপমানের অভেদ কল্পনা করা হলে তাকে রূপক অলঙ্কার বলে।
উদাহরণ
* জীবন-সিন্ধু মথিয়া যে কেহ আনিবে অমৃত বারি।
উৎপ্রেক্ষা
প্রবল সাদৃশ্যের জন্য উপমেয়কে যদি উপমান বলে ভুল বা সংশয় হয় তবে তাকে উৎপ্রেক্ষা বলে।
* আগে পিছে পাঁচটি মেয়ে, পাঁচি রঙিন ফুল।
অতিশয়োক্তি
উপমার চরম পরিণতি অতিশয়োক্তি। উপমেয়কে উল্লেখ না করে উপমানকে উপমেয়রূপে উল্লেখ করলে তাকে অতিশয়োক্তি বলে।
উদাহরণঃ
* মাঘের কোলে সূর্য ছড়ায়,
দুই হাতে সোনা মুঠি মুঠি।
সমাসোক্তি
উপমেয়ের উপর উপমানের ব্যবহার সমারোপিত হলে তাকে সমাসোক্তি অলঙ্কার বলে।
উদাহরণঃ
* পর্বত চাহিল হতে বৈশাখের নিরুদ্দেশ মেঘ।
বিরোধাভাস
যদি দুটি বস্তুর মধ্যে আপাত বিরোধ দেখা যায়, ওই বিরোধে যদি কাব্য চমৎকারিত্ব বা উৎকর্যের সৃষ্টি হয় তাকে বিরোধাভাস বলে।
উদাহরণ
* সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর।
অসঙ্গতি
একস্থানে কারণ থাকলে এবং অপর স্থানে কার্যোৎপত্তি হলে তাকে অসঙ্গতি অলঙ্কার বলে।
উদাহরণঃ
* হৃদয় মাঝে মেঘ উদয় করি
নয়নের মাঝে ঝরিল বারি।
ব্যাজস্তুতিঃ
নিন্দার ছলে প্রশংসা বা প্রশংসার ছলে নিন্দা হলে তাকে ব্যাজস্তুতি বলে।
উদাহরণ
* অতি বড় বৃদ্ধ পতি সিদ্ধিতে নিপুণ/ কোন গুণ নাই তার কপালে আগুন ⇨ ব্যাজস্তুতি
Comments