ছন্দ
পঙক্তি
কবিতার প্রত্যেকটি লাইনকেি ভিন্ন ভিন্ন পঙক্তি হিসেবে, এতে অর্থের পরিসমাপ্তি ঘটুক আর নাই ঘটুক।
অক্ষর
বাগযন্ত্রের ক্ষুদ্রতম প্রয়াসে উচ্চারিত ধ্বনি বা শব্দাংশের নাম অক্ষর।
মুক্তাক্ষর
স্বরধ্বনি দিয়ে শেষ হওয়া বা স্বরধ্বনি যুক্ত অক্ষরকে মুক্তাক্ষর বলে। যেমন- মামা, বাবা, মারা ইত্যাদি।
বদ্ধাক্ষর
ব্যঞ্জনধ্বনি দিয়ে শেষ হওয়া অক্ষরকে বদ্ধাক্ষর বলে।
যেমন- বন, মাঠ, গাছ ইত্যাদি।
ছন্দ
সংস্কৃত ভাষায় ছন্দ শব্দের অর্থ কাব্যের মাত্রা। কোনো কিছুর মধ্যে পরিমিত ও শৃঙ্খলার সুষম ও যৌক্তিক বিন্যাসকে ছন্দ বলে।
ছন্দের প্রকারভেদ
বাংলা ছন্দ তিন প্রকার। যথাঃ
১) স্বরবৃত্ত
২) মাত্রাবৃত্ত
৩) অক্ষরবৃত্ত
স্বরবৃত্ত ছন্দ
যে চন্দ রীতিতে উচ্চারণের গতিবেগ বা লয় দ্রুত, অক্ষরমাত্রেই এক মাত্রারবহয় তাকে স্বরবৃত্ত ছন্দ বলে। এ ছন্দের মূল পর্বের সংখ্যা চার। এ ছন্দকে দলবৃত্ত বা লৌকিক ছন্দ বা শ্বাসাঘাত ছন্দ বা ছড়ার ছন্দ বলে।
স্বরবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্য
১) মূল পর্বে মাত্রা সংখ্যা চার
২) এ ছন্দের লয় দ্রুত
৩) যেকোন অক্ষর (মুক্তাক্ষর বা বদ্ধাক্ষর) এক মাত্রার।
মাত্রাবৃত্ত ছন্দ
যে কাব্য ছন্দে মূল পর্ব চার, পাঁচ, ছয় বা সাত মাত্রার হয় এবং যা মধ্যম লয়ে পাঠ করা হয় তাঁকে মাত্রাবৃত্ত ছন্দ বলে।এ ছন্দকে বর্ণবৃত্ত বা ধ্বনিপ্রধান ছন্দ বা কলাবৃত্ত ছন্দ বলে।
মাত্রাবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্য
⇨ মূল পর্বের মাত্রা ৪, ৫, ৬, ৭ বা ৮ মাত্রার হয়। তবে ৬ মাত্রার প্রচলন বেশি।
⇨ অনুস্বর বা বিসর্গের পূর্ববর্তী স্বর দীর্ঘ।
অক্ষরবৃত্ত ছন্দ
যে ছন্দে সকল প্রকার মুক্তাক্ষর একমাত্রাবিশিষ্ট এবং বদ্ধাক্ষর শব্দের শেষে দুই মাত্রা, কিন্তু শব্দের আদিতে এবং মধ্যে একমাত্রা ধরা হয় তাঁকে অক্ষরবৃত্ত ছন্দ বলে। একে যৌগিক বা কলামাত্রিক ছন্দ বলে।
অক্ষরবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্য
⇨ মূল পর্বে মাত্রা সংখ্যা ৮ বা ১০ হয়
⇨ এ ছন্দে লয় ধীর বা মধ্যম
⇨ এ ছন্দে শব্দের আদি ও মধ্যে বদ্ধাক্ষর একমাত্রা এবং শব্দের শেষে দুই মাত্রা হয়।
⇨ এ ছন্দে সংযুক্ত বা অসংযুক্ত অক্ষর সমান হয়।
স্বরবৃত্ত ছন্দের উদাহরণ
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এলো বান
শিব ঠাকুরের বিয়ে হলো তিন কন্যে দান
মাত্রাবৃত্ত ছন্দের উদাহরণ
সোনার পাখি ছিল
সোনার খাঁচাটিতে
বনের পাখি ছিল
বনে।
অক্ষরবৃত্ত ছন্দের উদাহরণ
মরিতে চাহিনা আমি
সুন্দর ভুবনে
মানবের মাঝে আমি
বাঁচিবারে চাই।
পয়ার
যে ছন্দের মূল বর্গের অক্ষর সংখ্যা ১৪টি তাঁকে পয়ার বলে।
অমিত্রাক্ষর ছন্দ
কবিতার পঙক্তির শেষে মিলহীন ছন্দকে অমিত্রাক্ষর ছন্দ বলে। অমিত্রাক্ষর ছন্দের কবিতায় চরণের অন্ত্যমিল থাকে না। এ ছন্দ পয়ারের অনুরূপ। প্রতি পঙক্তিতে ১৪ অক্ষর থাকে, যা ৮+৬ পর্বে বিভক্ত। একে প্রবাহমান অক্ষরবৃত্ত ছন্দও বলে।
অমিত্রাক্ষর ছন্দের উদাহরণ
সম্মুখ-সমরে পড়ি, বীর চূড়ামণি
বীর বাহু চলি যবে গেলা যমপুরে
অকালে, কহ, হে দেবি অমৃতভাষিণি,
কোন বীরবরে রবি সেনাপতি পদে,
পাঠাইলা, রণে পুনঃ পুনঃ রক্ষঃকুলনিধি
রাঘবারি
Comments