সলংগা আন্দোলন

 সলংগা আন্দোলন ভারতীয় উপমহাদেশে তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী একটি আন্দোলন। এই আন্দোলন দমনে ব্রিটিশ হত্যাকান্ডকে 'বাংলার জালিয়ানওলাবাগ হত্যাকান্ড' হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

ইতিহাস

১৯২২ সালের ২৭ জানুয়ারি তরুণ নেতা মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ এর নেতৃত্বে তৎকালীন পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহকুমার সলঙ্গা হাটে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। ঐ দিন প্রায় ১২০০ প্রতিবাদী মানুষ ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারায়। আহত হয় ৪০০০-এরও বেশি। নিহতদের লাশের সাথে সংজ্ঞাহীন আহতদের উঠিয়ে নিয়ে ব্রিটিশ পুলিশ সিরাজগঞ্জের রহমতগঞ্জে গণকবর দেয়।

ঘটনার আগে ১৯২২ সালের জানুয়ারি মাসে বগুড়া ও পাবনা সীমান্তের ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে চান্দাইকোনায় পুলিশ স্বেচ্ছাসেবকদের সাপ্তাহিক বাজারে পণ্য বর্জন করতে বাধা দেয়।এতে জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের হাত থেকে রাইফেলটি ছিনিয়ে নিয়ে বাজারের কাছে ফুলজোর নদীতে ফেলে দেয়। এই ঘটনায় পুলিশ এলাকার কংগ্রেস কর্মী ও জনসাধারণের প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে।

কারণ

রক্তাক্ত সলংগা তদানিন্তন পাবনা জেলার সলংগা একটি বর্ধিষ্ণু ব্যবসায়িক জনপদ। সপ্তাহে ২ দিন হাট বসতো। ১৯২২ সালে ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার ছিল বড় হাটবার। মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ এর নেতৃত্বে অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনের কর্মীরা হাটে নেমেছে বিলেতি পণ্য ক্রয় বিক্রয় বন্ধ করতে। আর এই স্বদেশী আন্দোলনের কর্মীদের রুখতে ছুটে আসে তদানিন্তন পাবনা জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট জনাব আর. এন. দাস, জেলা পুলিশ সুপার ও সিরাজগঞ্জ মহকুমা প্রসাশক জনাব এস. কে. সিংহসহ ৪০ জন সশস্ত্র লাল পাগড়ীওয়ালা পুলিশের একটি দল। সলংগার গো-হাটায় ছিল বিপ্লবী স্বদেশী কর্মীদের অফিস। পুলিশ এসে তার ব্যাটিলিয়নদের নিয়ে কংগ্রেস অফিস ঘেড়াও দিয়ে গ্রেফতার করে নেতৃত্বদানকারী মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশকে। সঙ্গে সঙ্গে জনতার মধ্যে থেকে ম্যাজিষ্ট্রেট, পুলিশ সুপার ও মহুকুমা অফিসারকে ঘিরে জনতা তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে উদ্ধারের জন্য মিছিল বের করে। জনতার ঢল ও আক্রোশ দেখে ম্যাজিষ্ট্রেট জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে গুলি চালাতে নির্দেশ দেয়। শুরু হয়ে বুলেট-বৃষ্টি। ৪০টি রাইফেলের মধ্যে মাত্র একটি রাইফেল থেকে কোনো গুলি বের হয়নী। ঐ রাইফেলটি ছিল একজন বাঙ্গালী পুলিশের। এই পৈশাচিক হত্যাকান্ডে হতাহতের সরকারি সংখ্যা ৪৫০০ দেখানো হলেও বেসরকারি মতে ১০০০০-এরও অধিক হবে বলে জানা যায়। সলংগা হাটের হত্যাকান্ডের ঘটনা জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের চেয়ে বহুগুণ ভয়ংকর নৃশংস। অথচ ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের তথা শতাব্দির গুরুত্বপূর্ণ এই ঘটনা অত্যন্ত রহস্যজনকভাবে চাপা পড়ে আছে। বস্ততপক্ষে ভারতীয় উপমহাদেশে ১৯২২ সালের বৃটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে সলংগা হত্যাকান্ডের ঘটনা যেমন সবচেয়ে নৃশংস পাশবিক তেমনি নিহতের সংখ্যা সর্বাধিক।

বর্তমানে, ২৭ জানুয়ারি সেসব শহীদদের স্মরণ করে "সলংগা দিবস" পালিত হয়।

Comments